প্রকাশিত: Fri, Dec 30, 2022 3:41 PM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 3:20 PM

আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?

মঞ্জুরে খোদা টরিক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে ৪টি মেয়ের বোরকা-হিজাব পরহিত ছবি নিয়ে নানা জন নানান মন্তব্য করছেন। কিন্তু এ অবস্থা কি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ঘটেছে? যারা এই ছবি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন, তারা কি বাংলাদেশ থাকেন না, নাকি অন্য দেশে? তারা কি দেশের চিত্র-চরিত্রের পরিবর্তন দেখছেন না? আমার মা তাঁর জীবনদশায় যেকোনো পরিস্থিতিতে কখনো নামাজ কাজা করেননি, এমনকি মধ্যরাতের তাহাজ্জুতের নামাজও কখনো কাজা করেননি। 

হজ্বও করেছেন। তিনি অত্যন্ত পরহেজগার ছিলেন কিন্তু আমি কখনো তাঁকে বোরকা বা হিজার ব্যবহার করতে দেখিনি। আমার দাদীকে দেখিনি আমার নানীকেও কখনো হিজাব-বোরকা ব্যবহার করেননি। আমার বাড়িতেই বাবার তৈরি মসজিদ আছে। আমার বোনরা কেউ হিজাব-বোরকা ব্যবহার করে না। কিন্তু এ অবস্থা যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তৈরি হতে শুরু করেছে। 

আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে ছেলে-মেয়ের সহশিক্ষা ছিলো। আমি আমার কোনো সহপাঠি ও বান্ধবীকে বোরকা পড়তে দেখিনি। এমনকি বড়বোনদের বান্ধবীদেরও কখনো দেখিনি। আমার পাড়ার বা এলাকার কোনো খালাম্মা-মুরব্বিদেরও দেখিনি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন যখন আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবীদের ফেসবুকে গ্রুপ ছবি দেখি তখন তাদের দুই-একজন বাদে সবাইকে দেখি তাঁরা বোরকাধারী ও হিজাবি হয়েছেন। এটা শুধু আমার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বান্ধবীদের ক্ষেত্রেই নয়।

ছেলে বন্ধু ও সহপাঠীরাও কাবলি, পাঞ্জাবি, অথবা প্যান্ট, শার্ট, কোর্ট, দাড়ি-টুপিতে হয়েছেন হুজুর টাইপের। তাদের ভাষা, আদপ-কায়দাতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। এ পরিস্থিতি শুধু স্কুল, কলেজের বন্ধুদের ক্ষেত্রেই নয়। প্রগতিশীল রাজনৈতিক সহকর্মীদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। তাদের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও তাই দেখছি। আজ এ পরিস্থিতি আমাদের সমাজের সর্বত্রই হয়েছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে। আপনি ৫০-৬০-৭০-৮০ দশকের নেতা- নেত্রীদের ছবি দেখেন আর এখনকার নেতৃত্বের ছবি দেখেন উত্তর পেয়ে যাবেন। কিন্তু কেন এমনটা হলো কারা এমনটা করলো? 

আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? এ জন্য তাদের ইরান-আফগানিস্তানের মতো বিপ্লব করতে হয়নি। মানুষ দলে দলে, প্রতিযোগিতা করে সে অবস্থা ধারণ করছে। সে কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার ধারা চালু রেখে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইরানের মেয়েরা সে দেশের মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে জীবনপণ সংগ্রাম করছে। কাতারে কাতারে জীবন দিচ্ছে। আমাদের দেশে তখন মেয়েরা দলে দলে নিজেদের বন্দী করছে। আফগানিস্তানের দিকে ঝুকছে, তালেবানি পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। একেই কি বলা হবে আগামী দিনের ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশ?  লেখক ও গবেষক